ঢাকা ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
তাড়াশ প্রেসক্লাবে নবাগত ওসির মতবিনিময় ওসমান হাদীর উপর হামলার প্রতিবাদে তাড়াশে বিক্ষোভ মিছিল বাড়ির রাস্তায় বাঁশ ও টিনের বেড়া তাড়াশে ১৫ দিন ধরে অরুদ্ধ দু’টি পরিবার আইরিশ বধ, ইনিংস ব্যবধানে জয় টাইগারদের  হামজার জোড়া গোলেও জয় অধরা, সমতায় থামল বাংলাদেশ বন্ধ করার দাবী এলাকাবাসীর তাড়াশে জন বসতিপূর্ণ এলাকায় তারিফুলের মুরগীর খামার দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ছড়াচ্ছে নানা রোগ ব্যাধী তাড়াশে পিতার জমি ফেরত চাইতে গিয়ে হুমকির মুখে শামসুজ্জোহা তাড়াশে সুফলভোগী আদিবাসী নারী-পুরুষদের মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন তাড়াশ পৌর সভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে দোয়া চেয়েছেন শুকুর মির্জা তাড়াশে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা হাফিজুর বহিষ্কার

তাড়াশ-রানীরহাট সড়কে চার হাজার গাছ কাটার ঘোষণা, স্থানীয়দের উদ্বেগ: পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৩:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ ৫১৩ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নে ব্যাপক হারে গাছ কাটার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা। সম্প্রতি “১নং তালম ইউনিয়ন কৃষি রোপণ ও পরিচর্যা কমিটি” একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, তারা ৩৮৯০টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ (আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস, শিশু, ইত্যাদি) কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২০০ ঘনফুট কাঠ বিক্রি করা হবে, যার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে গত ১৬ জুলাই।আগামী ২৯ জুলাই দরপত্র জমা দান শেষ হলেই সর্বোচ্চ দর দাতা প্রায় চার হাজার গাছ কেটে নিয়ে যাবেন।

এই ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা ও পরিবেশকর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এভাবে গণহারে গাছ কাটা হলে একদিকে যেমন এলাকার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে এটি সরকারের বন সংরক্ষণ নীতির পরিপন্থী।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিলেজ ভিশনের উপদেষ্টা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা সমিতি ৩ হাজার ৮৯০টি গাছের মূল্য নির্ধারণ করে আগামী ১৬ জুলাই যে দরপত্র আহ্বান করেছেন তার মধ্যে ওই সড়কের উভয় পাশের প্রাকৃতিক ভাবে আপনা আপনি নিম, বাবলা, কড়ি, বট, বকন, পাইকড়সহ নানা জাতের জন্ম নেওয়া প্রায় অর্ধেক গাছ রয়েছে। যার মালিক কোনো ভাবেই ‘তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা সমিতি নয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে থাকা প্রায় অর্ধেক প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া মূল্যবান উপকারী গাছকেও মার্কিং করা হয়েছে। যার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

এদিকে ‘তাড়াশ-রানীরহাট’ আঞ্চলিক সড়কের বেড়খাড়ি থেকে রানীরহাট পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৪ হাজার গাছ কাটার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় আসার পর এলাকার সচেতন নাগরিক, পরিবেশবাদীদের সঙ্গে পাখি প্রেমিরাও গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘ এ সড়কের গাছে দিন ও রাতে অসংখ্য পাখি বাস করে। আবার গাছে অনেক পাখি বাসা বেঁধেছে। তাই সমিতি ও সংশ্লিষ্টদের স্বার্থে গণহারে গাছ কাটা হলে বাবুই, শালিক, ঘুঘু, বালিহাঁস, শামুককৈল, বক, ভারই, টোগা, ত্রিশূল, পানকৌড়িসহ পরিবেশের জন্য অতি উপকারী অনেক পাখি বসার জায়গা হারাবে।

তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচচর্যা সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই সড়কে অর্জুন, নিম, লাটিম,কড়ি গাছ তারা লাগাননি। তাহলে কেন সেটি মার্কিং করা হয়েছে এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সমিতির অফিসে আসেন বসে সমাধান করবো।পরিবেশকর্মী হাসিবুর রহমান জানান, “ওই গাছগুলো এলাকার ছায়া, প্রাণী আশ্রয় এবং কার্বন শোষণের বড় উৎস। বন সংরক্ষণ নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাছ কাটার আগে অবশ্যই পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) প্রয়োজন হয়, যা এই দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ নেই।

স্থানীয়দের দাবি, গাছ বিক্রির আগে একটি স্বচ্ছ তদন্ত ও পরিবেশগত মূল্যায়নের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে এই অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন, মাটির ক্ষয় ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্থানীয়রা বলেন, উন্নয়ন ও রাজস্ব আয়ের নামে প্রাকৃতিক বন উজাড় করা কখনোই টেকসই উন্নয়ন নয়। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা না করে কোনো উন্নয়নই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।বন কর্মকর্তা জানান, বন বিভাগ গাছের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। তবে গাছ কাটার অনুমতি দেবার মালিক বন বিভাগ না।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, গাছগুলোর ব্যাপারে জেলা পরিষদ সিন্ধান্ত দেবে। কারণ সড়কটি জেলা পরিষদের আওতাধীন।

সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ আফসানা ইয়াসমিন বলেন, গাছ কাটা বন্ধে এলাকা থেকে এখন কোনো আবেদন পাইনি। যুক্তিসঙ্গত আবেদন পেলে তা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃতিক পরিবেশ রক্ষার্থে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

তাড়াশ-রানীরহাট সড়কে চার হাজার গাছ কাটার ঘোষণা, স্থানীয়দের উদ্বেগ: পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা

আপডেট সময় : ০৫:৪৩:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নে ব্যাপক হারে গাছ কাটার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা। সম্প্রতি “১নং তালম ইউনিয়ন কৃষি রোপণ ও পরিচর্যা কমিটি” একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, তারা ৩৮৯০টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ (আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস, শিশু, ইত্যাদি) কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২০০ ঘনফুট কাঠ বিক্রি করা হবে, যার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে গত ১৬ জুলাই।আগামী ২৯ জুলাই দরপত্র জমা দান শেষ হলেই সর্বোচ্চ দর দাতা প্রায় চার হাজার গাছ কেটে নিয়ে যাবেন।

এই ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা ও পরিবেশকর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এভাবে গণহারে গাছ কাটা হলে একদিকে যেমন এলাকার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে এটি সরকারের বন সংরক্ষণ নীতির পরিপন্থী।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিলেজ ভিশনের উপদেষ্টা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা সমিতি ৩ হাজার ৮৯০টি গাছের মূল্য নির্ধারণ করে আগামী ১৬ জুলাই যে দরপত্র আহ্বান করেছেন তার মধ্যে ওই সড়কের উভয় পাশের প্রাকৃতিক ভাবে আপনা আপনি নিম, বাবলা, কড়ি, বট, বকন, পাইকড়সহ নানা জাতের জন্ম নেওয়া প্রায় অর্ধেক গাছ রয়েছে। যার মালিক কোনো ভাবেই ‘তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা সমিতি নয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে থাকা প্রায় অর্ধেক প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া মূল্যবান উপকারী গাছকেও মার্কিং করা হয়েছে। যার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

এদিকে ‘তাড়াশ-রানীরহাট’ আঞ্চলিক সড়কের বেড়খাড়ি থেকে রানীরহাট পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৪ হাজার গাছ কাটার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় আসার পর এলাকার সচেতন নাগরিক, পরিবেশবাদীদের সঙ্গে পাখি প্রেমিরাও গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘ এ সড়কের গাছে দিন ও রাতে অসংখ্য পাখি বাস করে। আবার গাছে অনেক পাখি বাসা বেঁধেছে। তাই সমিতি ও সংশ্লিষ্টদের স্বার্থে গণহারে গাছ কাটা হলে বাবুই, শালিক, ঘুঘু, বালিহাঁস, শামুককৈল, বক, ভারই, টোগা, ত্রিশূল, পানকৌড়িসহ পরিবেশের জন্য অতি উপকারী অনেক পাখি বসার জায়গা হারাবে।

তালম ইউনিয়ন বৃক্ষরোপণ ও পরিচচর্যা সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই সড়কে অর্জুন, নিম, লাটিম,কড়ি গাছ তারা লাগাননি। তাহলে কেন সেটি মার্কিং করা হয়েছে এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সমিতির অফিসে আসেন বসে সমাধান করবো।পরিবেশকর্মী হাসিবুর রহমান জানান, “ওই গাছগুলো এলাকার ছায়া, প্রাণী আশ্রয় এবং কার্বন শোষণের বড় উৎস। বন সংরক্ষণ নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাছ কাটার আগে অবশ্যই পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) প্রয়োজন হয়, যা এই দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ নেই।

স্থানীয়দের দাবি, গাছ বিক্রির আগে একটি স্বচ্ছ তদন্ত ও পরিবেশগত মূল্যায়নের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে এই অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন, মাটির ক্ষয় ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্থানীয়রা বলেন, উন্নয়ন ও রাজস্ব আয়ের নামে প্রাকৃতিক বন উজাড় করা কখনোই টেকসই উন্নয়ন নয়। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা না করে কোনো উন্নয়নই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।বন কর্মকর্তা জানান, বন বিভাগ গাছের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। তবে গাছ কাটার অনুমতি দেবার মালিক বন বিভাগ না।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, গাছগুলোর ব্যাপারে জেলা পরিষদ সিন্ধান্ত দেবে। কারণ সড়কটি জেলা পরিষদের আওতাধীন।

সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ আফসানা ইয়াসমিন বলেন, গাছ কাটা বন্ধে এলাকা থেকে এখন কোনো আবেদন পাইনি। যুক্তিসঙ্গত আবেদন পেলে তা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃতিক পরিবেশ রক্ষার্থে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।